শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নির্বাচনের পর বাড়ি ফিরেই মারধরের শিকার বিএনপিকর্মী মেয়ের জন্য বিশেষ আয়োজন পরীর মাস্টার্সেও পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির কথা ভাবা হচ্ছে: ঢাবি উপাচার্য নৈরাজ্য করলে ডাবল শিক্ষা পাবে বিএনপি, আমরা বসে নেই: ওবায়দুল কাদের জেলেনস্কিকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে উত্তাল ইউক্রেন ‘শয়তানের নিঃশ্বাস‘ নামের যে ড্রাগ প্রতারণায় ব্যবহার হচ্ছে দস্যুর দখলে লক্ষ্মীপুরের দ্বীপ চর মেঘা, বিপাকে দেড়শতাধিক কৃষক নিজ বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত পাইলট আসিম জাওয়াদ মালদ্বীপ থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করেছে ভারত বাংলাদেশের জন্য মনোনীত মার্কিন বিশেষ রাষ্ট্রদূত মিল আগে যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন
দন্তক্ষয় থেকে রক্ষা পেতে করণীয়

দন্তক্ষয় থেকে রক্ষা পেতে করণীয়

দাঁতক্ষয় একটি সাধারণ রোগ। শিশু-কিশোরের তো বটেই, যে কোনো বয়সী মানুষের এ রোগ হতে পারে। দাঁত পড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে দন্তক্ষয় অন্যতম।

সমস্যার ধরন : দাঁতে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলো শর্করা জাতীয় খাদ্যকণিকা ও মুখের থুতুর সঙ্গে মিলে ডেন্টাল প্ল্যাক নামক আঠালো উপাদান তৈরি করে। ডেন্টাল প্ল্যাকে জীবাণুগুলোর বংশবিস্তার ঘটে। শেষে দাঁতের ওপর একজাতীয় অ্যাসিড নিঃসরণ করে, যা দাঁত ক্ষয় করতে শুরু করে। ব্রাশ করে যদি ডেন্টাল প্ল্যাক পরিষ্কার করা না হয়, তা হলে ক্ষয়রোগ শুরু হতে পারে। ডেন্টাল ক্যারিজ মূলত শুরু হয় দাঁতের এনামেল অর্থাৎ বাইরের আবরণের ওপর। তবে দাঁতের শেকড়ের বাইরের আবরণেও (সিমেন্টাম) এ রোগ হতে পারে। যদি মাড়ি রোগের কারণে কারও দাঁতের শেকড় উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, তা হলেই শেকড়ের বাইরের আবরণে ডেন্টাল ক্যারিজ হওয়া সম্ভব। এ রোগের সূচনা হয় ছোট একটি গর্তের মাধ্যমে। প্রাথমিক অবস্থায় ডেন্টাল ক্যারিজ কোনো ব্যথা সৃষ্টি করে না। তবে ঠান্ডা পানি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে শিরশির করা অর্থাৎ সংবেদনশীলতা প্রকাশ পায়। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করালে সমস্যা ক্রমে বড় হতে হতে দাঁতের ভেতরের মজ্জা (পাল্প) আক্রান্ত করে। মজ্জার সঙ্গে স্নায়ুর সংযোগ থাকে। ফলে দাঁতের মজ্জা যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। এ অবস্থার নাম মজ্জার প্রদাহ বা পাল্পাইটিস। দীর্ঘদিন ধরে মজ্জার প্রদাহ চলতে থাকলে ক্রমে মজ্জা মরে যেতে থাকে, যাকে বলা হয় পাল্পাল নেক্রোসিস। এ জাতীয় সমস্যায় জীবাণু সংক্রমণ দেখা দিয়ে মাড়ি ফুলে যেতে পারে, পুঁজ জমতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে গালও ফুলে যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় ডেন্টাল ক্যারিজ ধরা পড়লে, তা পরিষ্কার করে ভরাট (ফিলিং) করে দিয়ে সহজেই নিরাময় করা যায়।

চিকিৎসা : মুখের সামনের দিকের দাঁত ফিলিং করার জন্য দাঁতের রঙয়ের সঙ্গে মিল রেখে ফিলিং উপাদান নির্বাচন করা হয়। কিন্তু পেছনের দিকের দাঁতের ক্ষেত্রে তা না করলেও চলে। এ ক্ষেত্রে যে ফিলিং উপাদান খাবার চিবানোর চাপ সহ্য করতে পারে, এমন উপাদান ব্যবহার করা হয়। যদি ডেন্টাল ক্যারিজ যথাসময়ে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে ক্যারিজ আরও বেশি বড় হয়ে দাঁতের মজ্জাকে আক্রান্ত করে। ফলে মজ্জার প্রদাহ শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে শুধু দাঁত ভরাট করে এ সমস্যার নিরাময় সম্ভব হয় না। তখন ‘রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট’ নামক চিকিৎসার দরকার হতে পারে। এ চিকিৎসাটি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে দাঁতের ভেতর থেকে সব মজ্জা একটু একটু করে বের করে আনা হয়। দাঁতে মজ্জার অবস্থান হলো দাঁতের মুকুটের ভেতর ‘পাল্প চেম্বার’ নামক স্থানে এবং শেকড়ের ভেতর ক্যানাল নামক সরু নালিতে। মজ্জাগুলো বের করা হয়ে গেলে শিকড়ের ভেতরের ক্যানালগুলো পরিষ্কার করা হয়। এরপর ক্যানালগুলো ভরাট করা হয় রাবার জাতীয় উপাদান দিয়ে। সবশেষে দাঁতের চূড়ান্ত ফিলিং সম্পন্ন করা হয়। ডেন্টাল ক্যারিজের কারণে যদি সংক্রমণ (ইনফেকশন) দেখা দেয় এবং মাড়িতে পুঁজ হয়, তখন ক্ষেত্রবিশেষে পুঁজ সরিয়ে ফেলার দরকার হতে পারে। তবে মাড়ির সংক্রমণ হলে অনেক সময়ই দাঁতের চারপাশের হাড় ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। তখন দাঁত নড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দাঁতটি সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো দাঁতের শেকড়ের শেষ মাথায় সিস্ট, গ্রানুলোমা বা ইনফেকশন দেখা যায়। তখন দাঁতটি সংরক্ষণের পদ্ধতি বেশ জটিল হয়ে ওঠে। সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে দাঁতটি তুলে ফেলার দরকার হতে পারে। ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি হওয়ার কারণে দাঁতের গর্ত যদি খুব বেশি বড় হয়ে যায়, তখন শক্ত কিছু খেতে গিয়ে দাঁতের মুকুট ভেঙে যেতে পারে। তখন সাধারণ ফিলিং করে দাঁতটি মেরামত করা সম্ভব হয় না। দাঁতে ক্যাপ করার দরকার হতে পারে।

পরামর্শ : ডেন্টাল ক্যারিজ প্রতিরোধের জন্য দরকার প্রতিদিন সকাল ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুবেলা নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা। ফোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা ভালো। ফোরাইডযুক্ত মাউথওয়াশও ব্যবহার করা যায়। ডেন্টাল কিনিকে দাঁতের ওপর স্থানীয়ভাবে ফোরাইড ব্যবহার করারও ব্যবস্থা আছে। শিশুদের দাঁতে যেন ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি হতে না পারে, সেজন্য দাঁতে ‘ফিশার সিলেন্ট’ নামক ফিলিং উপাদান ব্যবহার করে ডেন্টাল ক্যারিজ প্রতিরোধ করা যায়। সবচেয়ে বেশি জরুরি, প্রতি ছয় মাস অন্তর অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে দাঁত ও মুখ গহ্বর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া। এতে সহজেই দাঁতের চিকিৎসার জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

লেখক : ডেন্টাল স্পেশালিস্ট

তায়েফ ডেন্টাল হসপিটাল, সৌদি আরব

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877